ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় স্বরণকালের বিশাল গণসংবর্ধনায় সালাহউদ্দিন আহমেদ 

গনহত্যায় জড়িতদের বাংলার জমিনে ঠাই হবে না, আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিচার হবে 

১০ বছর আড়াই মাসের বেশি সময় ভারতের শিলংয়ে নির্বাসিত জীবন থেকে বাংলাদেশে ফেরার পর গতকাল বুধবার নিজের জন্মভূমি ক্সবাজারে এসেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য  সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ও চকরিয়া পেকুয়া (কক্সবাজার ১) আসনের সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল দুপুরে তিনি সহধর্মিণী সাবেক এমপি এডভোকেট হাসিনা আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান।
এরপর কক্সবাজার জেলা বিএনপির কার্যালয় পরিদর্শন শেষে তিনি কক্সবাজার, রামু ও ইদগাও উপজেলা বিএনপি আয়োজিত পৃথক গণসংবর্ধনা সমাবেশে যোগদান করেন। বিকাল পাচটার পরে তিনি সড়কপথে পৌছান চকরিয়া পৌর বাসটার্মিনাল মাঠে চকরিয়া উপজেলা, পৌরসভা বিএনপি আয়োজিত স্বরণকালের বিশাল গণসংবর্ধনা সমাবেশে। এসময় সমাবেশটি লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। গণসংবর্ধনা সমাবেশের মাঠ পেরিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেখতে আসা দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও জনসাধারণের উপস্থিতি যেন তিলধারণের ঠাই ছিল না চকরিয়া পৌর বাসটার্মিনাল মাঠে। কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশ এলাকার আশপাশের জনপদ।
চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক প্রবীণ রাজনীতিবিদ এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসংবর্ধনা সমাবেশে প্রধান অতিথি আলহাজ্ব সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা ছিল বলেই মহান রাব্বুল আলামিনের দয়ায় আমি আওয়ামী লীগের মৃত্যুকুপ থেকে ফিরে আসতে পেরেছি। আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখতি পারছি। আমি বন্দিদশায় সবসময় আল্লাহর দরবারে একটি ফরিয়াদ জানিয়েছি, মৃত্যু হলেও আমার মরদেহ যাতে গুম করা না হয়, মরদেহ আমার পরিবারকে দেয়, চকরিয়া পেকুয়ার মাটিতে আমার জানাজা হয়৷ মহান আল্লাহ আমার ফরিয়াদ কবুল করেছেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে আর জুলম নির্যাতন সহ্য করা হবেনা। সুশাসন নিশ্চিতের মাধ্যমে শত-সহস্্র শহীদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা হবে। তাদের রক্তের অঙ্গিকার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মান করা হবে। বাংলাদেশে মুসলমান,  হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান সবাই এক এবং অভিন্ন, এখানে সবার পরিচয় হবে আমরা সবাই বাংলাদেশী।
তিনি বলেন, ভোটের অধিকার হরণ করে ক্ষমতা নেওয়া স্বৈরাচারী হাসিনা মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশে একদলীয় বাকশালি শাসন কাযেম করেছিল। বাংলাদেশের সংবিধানকে কাটছাঁট করে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বানিয়ে  গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছিল। এভাবে প্রতিটি সেক্টরে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করেছিল স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার।
তিনি বলেন, দেশপ্রেমিক ছাত্রজনতার বৈপ্লবিক আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ নতুনভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই অর্জন ধরে রাখতে হবে। তবে এখনো হাসিনা সরকারের দেশী-বিদেশী  দোসররা নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এদেশের ছাত্রজনতার বিজয় তাঁরা নস্যাৎ করতে চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের জনগণের বিজয় এখনো পুরোটাই অর্জন হয়নি। তবে যেদিন অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দলীয় সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসবে, সেইদিন আমাদের বিজয় শতভাগ নিশ্চিত হবে। সেটি না হওয়া পর্যন্ত সবাই রাজপথে থাকবেন। আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আপনাদের অধিকার আপনাদের রক্ষা করতে হবে। সেখানে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। যাঁরা অতীতে অন্যায় অবিচার অপর্কমে জড়িত ছিল, তাদেরকে আইনের হাতে তুলে দেবেন, আইনের মাধ্যমে তাদের শাস্তি ও সাজা নিশ্চিত করা হবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশে গনহত্যা চালিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই। যাঁরা গনহত্যায় জড়িত, ছাত্রজনতা ও নিরীহ মানুষকে গুলি করে মেরেছে, আগামীতে বাংলাদেশে তাদের ঠাই নেই। তাদের বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে করা হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যদি দিল্লিতে বসে বাংলাদেশ বিরোধী নতুন করে কোন ষড়যন্ত্র করা হয়, তাহলে সেখান থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে এসে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তিনি এসময় সমাবেশে উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামীতে গণহত্যায় জড়িত চক্রের দোসররা ভোট চাইতে আসলে আপনারা তাদেরকে বয়কট করবেন। এব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফখরুদ্দিন ফরায়জী ও বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ এমএ মনজুর এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত  সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভা বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম হায়দার, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম, কক্সবাজার জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জ্বল, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিশান, বিএনপি নেতা এসএম আবুল হাশেম, এম মোবারক আলী, গিয়াস উদ্দিন, কুতুবউদ্দিন কমিশনার, এএম আলী আকবর, চকরিয়া উপজেলা উপজেলা যুবদলের সভাপতি সাংবাদিক এএম ওমর আলী, চকরিয়া পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র শহিদুল ইসলাম ফোরকান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সালাহউদ্দিন আহমেদ এদিন রাত সাতটার দিকে নিজের জন্মভূমি পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া চৌমুহনী চত্তরে আরো একটি গণসংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রেখেছেন। ##

পাঠকের মতামত: